B

Friday, April 18, 2025

“শেষটা এমনি”

“শেষ চিঠি” ছোট্ট এক নদী-ঘেরা শহর। নদীর নাম শীতলেশ্বরী। এই শহরে বসবাস করে দুই প্রাণ – আরিজ ও মায়া। তারা ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে, স্কুলের বেঞ্চ ভাগ করে নিয়েছে, নদীর ধারে বসে গল্প করেছে, একে অপরের চোখে ভবিষ্যৎ দেখেছে। মায়ার চোখে ছিল স্বপ্ন, আরিজের চোখে ছিল সেই স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। মায়া চেয়েছিল ডাক্তার হতে। আরিজ ছিল এক চিত্রশিল্পী। সে মায়ার প্রতিটি মুহূর্ত ধরে রাখতে ভালোবাসত ক্যানভাসে। মায়া যখন ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকা চলে গেল, আরিজ তাকে প্রতিদিন চিঠি লিখত। তার চিঠিতে থাকত সাহস, ভালোবাসা, আর নদীর কোলঘেঁষে তাদের ফেলে আসা গল্পগুলোর ঝাপসা স্মৃতি। মায়া ভর্তি হলো। ডাক্তারি পড়ার চাপ আর শহরের ব্যস্ততায় চিঠির উত্তর কমতে লাগল। কিন্তু আরিজ লেখা থামায়নি। একদিন, হঠাৎ করেই চিঠি পাঠানো বন্ধ হয়ে গেল। মায়া অনেক চেষ্টা করল যোগাযোগের। বাড়ি ফোন করল, বন্ধুদের জিজ্ঞেস করল, কিন্তু কেউ কিছু জানে না। অবশেষে, তিন মাস পর সে ছুটিতে বাড়ি ফিরল। শীতলেশ্বরীর পাশে বসে থাকা বুড়ো মাঝি তাকে জানাল – “আরিজ তো চলে গেছে মা। ওই ক্যানভাসের মধ্যে তোর মুখ আঁকতে আঁকতেই একদিন হার্ট অ্যাটাক করল। শেষবারের মতো তোর চিঠি পড়েই চুপ হয়ে গেল ছেলেটা।” মায়া ঝড়ের মতো ছুটে গেল আরিজের ঘরে। জানলার পাশে পড়ে থাকা এক খামে লেখা ছিল— "শেষ চিঠি, মায়ার জন্য।" চিঠিতে লেখা ছিল: “মায়া, যদি কখনও ফিরে আসো আর আমায় না পাও, ক্যানভাসগুলো দেখে নিও। আমি তোকে ভালোবাসতাম রঙের চেয়েও বেশি। যদি জন্ম থাকে, শীতলেশ্বরীর ধারে আবার দেখা হবে। শুধু এবার চিঠি নয়, একটা ছবি রেখে যাবো তোর জন্য।” মায়া কান্না চেপে রাখতে পারল না। তার চোখের জলে ভিজে গেল শেষ চিঠির অক্ষরগুলো। সেই দিন থেকেই সে আর ঢাকায় ফেরেনি। আজও, কেউ কেউ দেখে— এক নারী প্রতিদিন শীতলেশ্বরীর ধারে বসে থাকে, একটা পুরোনো চিঠি হাতে। তার চোখে জল নেই, কেবল নদীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি।

No comments:

Post a Comment

“শেষটা এমনি”

“শেষ চিঠি” ছোট্ট এক নদী-ঘেরা শহর। নদীর নাম শীতলেশ্বরী। এই শহরে বসবাস করে দুই প্রাণ – আরিজ ও মায়া। তারা ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে, ...